| |
               

মূল পাতা রাজনীতি বিএনপি ঈদের পর আন্দোলন আরো জোরদার হবে : মির্জা ফখরুল


ঈদের পর আন্দোলন আরো জোরদার হবে : মির্জা ফখরুল


রহমত নিউজ ডেস্ক     26 June, 2023     10:01 PM    


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনারা দেখছেন আমরা আন্দোলনে আছি। মূলত একদফার আন্দোলনেই আছি। এটা একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবে আসবে তা খুব শিগগির দেখতে পারবেন...শিগগির। ঈদের পর আমাদের আন্দোলন আরো জোরদার হবে, আরও বেগবান হবে। আমরা যারা একসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছি, তাদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলন আরও বেগবান করবো। আন্দোলন বেগবান হবে। দেখেন রমজান কিংবা ঈদ বলে কোনো জিনিস নেই। ওটা অন্য ব্যাপার। আন্দোলনের ক্ষেত্রে রমজান বা ঈদ কোনো বিষয় না। আমরা আমাদের মতো করে যাই। রূপরেখা বলেন, যা বলেন সবই আসবে। অস্থির হবেন না। ইউ মাস্ট প্রেসেন্স। আমাদের খবর পেলে ভালো হয় কিন্তু আমাদের তো কৌশল আছে, আমাদের অনেক কৌশল আছে। আমরা আমাদের মতো করে যেতে চাই।

সোমবার (২৬ জুন) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব ঈদ উদযাপনসহ দলীয় কর্মসূচিতে মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও যাচ্ছেন। এবার তিনি সেখানে ঈদ উদযাপন করবেন এবং বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করবেন। এজন্য সাংবাদিকদের ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাতে গুলশানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সময় আছে, সরকারের শুভবুদ্ধি উদয় হোক। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারা একটা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করা, এর আগে তাদের পদত্যাগ করা। এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে কোনো মতেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না। সেজন্য আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে কনসেনসাসের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকার যেটা আমরা নির্বাচনকালীন সরকার বলছি সেটা করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়া হবে, সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি নিয়ে এসেছি, সংশোধনীর ওপর আলোচনা করছি, পরবর্তীতে সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটা রূপরেখা আসবে বলে আমরা আশা করছি।

তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন না দিলে যদি আপনার ক্ষমতায় না থাকা হয় তাহলে তো নাই। বলেছেন যে, উনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দেবেন না। তাহলে উনি নাই। আবার উনি গ্যাস বিক্রি না করলে থাকা যাবে না। তাহলে উনি নাই। মানেটা তো সেটাই দাঁড়ায়। আসলে এই বক্তব্যটা উনার (প্রধানমন্ত্রী) নিজের, উনার, উনার দলের। আমাদের তো সেটা না। আমরা বরাবরই বলে আসছি, তাদের দুঃশাসন। এটা এমন একপর্যায় চলে গেছে যে, শুধু দেশের মানুষই না আন্তর্জাতিক বিশ্ব বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, তোমার এখানে মানবাধিকার নেই, তোমার এখানে গণতন্ত্র নেই। আমরা মনে করি যে, দেয়ার ইজ দ্য ট্রুথ। বিদেশিদেরটা আপনারা বেশি শুনেন আরকি। আর আমরা গত ১২ বছর ধরে বলছি, চিৎকার করছি, আমাদের ৬শ মানুষ গুম হয়ে গেলো, আমাদের সম্প্রতি রাস্তায় ১৭ জন নেতাকর্মী গুলি খেয়ে মারা গেলো… তখন কিন্তু সেটাকে আপনারা গুরুত্ব দেন না। দ্যাট ইজ দ্য প্রোভলেম। যতক্ষণ পর্যন্ত গার্ডিয়ানে লেখা না হবে, স্টেটসম্যানে না লেখা হবে, যতক্ষণ বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকায় না বলা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে চান না। তবে আরেকটা কারণ হচ্ছে আপনারা (বাংলাদেশের গণমাধ্যম) এমন একটা যাঁতাকলে পড়েছেন যেটা বাস্তবতা আপনারা সব কথা বলতে পারেন না, লিখতে পারেন না, দেখাতে পারেন না। এটা সম্ভব হচ্ছে না। কেনে? কারণ মিডিয়া কনট্রোল, মিডিয়া ডিপ্রেশন, বিভিন্ন নিবর্তন মূলক আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এভাবে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কীভাবে চলতে পারে?

তিনি আরো বলেন, বিশ্বাস করেন আমার মাঝে মধ্যে গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে… এই বাংলাদেশ তো আমরা চাইনি ভাই। ১৯৭১ সালে এজন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এমন একটা পরিবেশ আমরা দেখতে চাইনি….। আগেকার দিনগুলোতে কি উৎসবের মতো পোস্টার-টোস্টার দিয়ে সকাল বেলা রান্নাবান্না করে ভোট দেওয়ার জন্য মানুষ প্রস্তুতি নিতো। আর এখন ভোটের আশপাশে নাই। কারণ কি যে, এখানে ভোট দিয়ে লাভ নাই, ভোট দিলে উল্টো দিকে চলে যায়। এক কঠিন অবস্থা। এই একটা অবস্থার মধ্যে আমরা কি করে আশা করতে পারি যে, এখানে এই সরকার থাকবে আর সেখানে সুষ্ঠু ভোট হবে।  মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুল বুঝিয়ে বলা যে, অর্থনীতি খুব শক্ত আছে, ভালো আছে, সবল আছে। দেশের অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলেন, তারা সবাই বলবেন, দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এই সংকটটা বড় রকমের সংকট। আপনি আমদানি করতে পারছেন না, ব্যাংক থেকে টাকাপাচার হয়ে চলে গেছে। জনগণের যে ন্যূনতম পণ্যসামগ্রী চাল-ডাল-তেল। সেগুলো মূল্য কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য কোনো কার্যকর কাজ করতে পারছেন না। ইনফ্লেশন কমানোর জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নাই। বাজেট ও মুদ্রানীতিতে ইনফ্লেশন কমানোর কোনো ব্যবস্থা নাই। অর্থাৎ মূল জায়গাগুলো বা সমস্যাগুলোতে এডড্রেস করার কোনো পদক্ষেপ নাই।

ফখরুল বলেন, উপরন্তু কালকেই দেখলাম সংসদে যে, ব্যাংকের পরিচালকদের আবার ১২ বছর করেছেন। যেটা প্রস্তাবেও ছিল না। কার ইঙ্গিতে, কার হুকুমে এটা হলো? এই দেশ কীভাবে চলে আমরা জানি না। সরকারি দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবই করা হয় নাই। হঠাৎ করে দেখলাম একজন সদস্য বললেন, সরকার মেনে নিলো। আমরা দেখতে পারছি এই সরকারের সাধারণ জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নাই। তাদের দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র যারা লুট করছে, বিদেশে অর্থবিত্ত তৈরি করছে তাদের কাছে। ১০% ধনীর হাতে ৪১% আয়। মানুষ যাবে কোথায়? যেদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর তাদের আয় বাড়ছে না, তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছে না। সেই দেশে আপনি কীভাবে এটাকে জনগণের সরকার বলতে পারেন। গতকাল উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, আওয়ামী লীগ না থাকলে না কি দেশের উন্নতি হয় না। কোথায় উন্নতি? একটু দেখেন। উড়াল সড়ক, টানেল…আজকে কাঁচা মরিচের দাম তিনশ টাকা পার হয়ে চারশ টাকা। তাহলে কোথায়? হোয়ার ইজ দ্যা গভমেন্ট, গভমেন্ট আছে কি? এতো ভয়াবহ পরিস্থিতি। আপনি দেখেন ট্রাফিক কনট্রোল হয় না, জিনিসপত্রের দাম কমানোর ব্যবস্থা নাই, আপনার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই। রাস্তায় যে দুর্ঘটনাগুলো হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখবেন যে, মিনিমাম যে আইনকানুনগুলো আছে সেগুলো না মানার জন্য। গাড়ি যারা চালায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখবেন অল্প বয়সের ছেলেরা চালাচ্ছে, ফলে দুর্ঘটনা। আর ঢাকা শহরের বেশিভাগ গাড়ির মালিক হচ্ছে অন্য ধরনের মানুষেরা। যারা আইন নিয়ন্ত্রণ করে তারাই না কি এই গাড়িগুলোর মালিক বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। আপনি যদি রাতের বেলা মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে রাস্তা দিয়ে যান দেখবেন অতিক্রম করতে পারবেন না। সক বাসগুলো একেবারে পুরো রাস্তা ব্লক করে থেমে আছে। ওই গাড়িগুলো না কি সব পাওয়ার ফুল লোকজনের।’

রিজার্ভের অর্থ খরচ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, সিডিপি এরা বিভিন্ন সময়ে রিপোর্ট করেছে, সেখানে পরিষ্কার দেখা গেছে যে, আসলে রিজার্ভের টাকা যেটা করেছে, সেটা হচ্ছে যে, ইম্পোর্ট কস্ট দেখিয়ে বেশি করে ওয়ার ইনভেয়স করে টাকা বের করে নিয়ে চলে গেছে। আর রিজার্ভের টাকা থেকে লোন (আইডিএফ) দেওয়া হয়েছে সেটা রিজার্ভের টাকা থেকে খরচ করতে পারে না। এভাবে তারা (সরকার) রিজার্ভ থেকে টাকা বের করে নিয়ে নিজেরাই পাচার করেছে। আজকেও আছে, সংসদে জাতীয় পার্টির একজন নেতা বলেছেন যে, ব্যাংক খালি করে নিয়ে যাচ্ছে দেখার কেউ নেই। এটাই সত্য। এভাবে যদি চলতে থাকে বর্গীরাও এখানে হার মেনে যাবে। এত ভয়াবহভাবে দেশের টাকা লুট করতে থাকেন সেদেশে অর্থনীতি কীভাবে টিকে থাকতে পারে। এই নির্বাচনগুলোতে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাই। নির্বাচনে তো সবসময় একটা প্রতিপক্ষ থাকবে। সেই প্রতিপক্ষই তো নাই। এসব তো ওয়ান সাইডেড, একতরফা। আমরা বলি ওয়াকওভার। এটা নির্বাচন নির্বাচন খেলা করছে এই তো...। আপনারা পত্রিকায় লিখছেন, এবার গুরুর দাম চড়া, ক্রেতার সংখ্যা কম। যে দাম বেড়েছে সেটার জন্য মানুষ কিনতে পারছে না। কস্ট অব প্রাইজ, তারা যে গরু নিয়ে এসেছে, গরুগুলো পালন করতে তাদের যে খরচটা হয়েছে সেই খরচ এত বেশি ছিল যে তারা দাম কমাতে পারছে না। ফলে বিক্রি হচ্ছে না। এবারের বাজার খুব চড়া। এবার ক্রেতা নেই কারণ চড়া বাজারের কারণে।

সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের একাউন্টধারীরা অর্থ তুলে নেয়ার প্রসঙ্গ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, টাকা-পয়সা যাদের বেশি হাতে আছে তারা টাকা কোথায় রাখছে কেউ জানে না। এরা আবার এখন সুইস ব্যাংক থেকে সব টাকা বের করে নিয়ে এসেছে? এসব টাকা… কাতারে যাচ্ছে না মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যাচ্ছে তা আমরা জানি না। এটা সত্য যে, সুইস ব্যাংকের টাকা বেরিয়ে আসছে। এত কিছুর পরও তাদের (সরকার) কোনো পরিবর্তন হয় নাই। গতকালই লাকসামে আমাদের কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালামের বাড়িতে রাত ১০টায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৪-৫ শতাধিক নেতাকর্মী সশস্ত্র অবস্থায় হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে। সব কিছু লুটপাট করেছে। অনেক নেতাকর্মীকে কুপিয়েছে, আহত করেছে (ছবি দেখিয়ে)। এভাবে নেতাকর্মীদের হামলা চালাচ্ছে, আহত করছে। একদিকে নেতাকর্মীদের ওপর ওরা হামলা করছে। আরেকদিকে আমাদের দলের পটেনশিয়াল কনডিডেটদের তুলে দিয়ে যাওয়া, ভয় দেখানোর কাজ করছে। শুধু তাই নয়, যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তাদের চাকরিচ্যুত করছে, বাধ্য করছে সেখান থেকে রিজাইন করতে। আপনি কীভাবে আশা করেন এখানে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। এখানে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, জনগণের অভ্যুত্থানে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি মানতে বাধ্য হবে। আমরা বলতে চাই, তাদের যেতেই হবে। একটা কেয়ারটেকারের ব্যবস্থা করে ক্ষমতা ছেড়ে দিতেই হবে।